Samsung কী China'তে ফোন উৎপাদন তবে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিবে?

বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীনের তিয়ানজিনে একটি মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা বন্ধ করতে যাচ্ছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। দেশটিতে স্থানীয় সাশ্রয়ী ডিভাইস নির্মাতাদের কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।

 

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যমতে, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষস্থান এখনো দখলে রেখেছে স্যামসাং। কিন্তু ডিভাইস বাজারে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের অংশীদারিত্ব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যে কারণে স্মার্টফোন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীরা তুলনামূলক কম দামে হ্যান্ডসেট বিক্রি করায় দেশটিতে চাহিদা কমেছে স্যামসাং ডিভাইসের। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল ছিল মাত্র ১ শতাংশ। অথচ পাঁচ বছর আগেও চীনে তাদের দখল ছিল ১৫ শতাংশ। হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে বাজার দখল হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, আমাদের মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলমান, তা সত্ত্বেও আমাদের একটি কঠোর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়েছে। আমরা চীনের তিয়ানজিন স্যামসাং ইলেকট্রনিকস টেলিকমিউনিকেশন নামে ফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম স্থগিত করতে যাচ্ছি। বর্তমানে এ কারখানায় ২ হাজার ৬০০ জন কর্মী রয়েছে। চলতি বছর শেষে কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।

 

বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তিয়ানজিন কারখানার কর্মীদের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ দেয়ার পাশাপাশি অন্য স্যামসাং কারখানায় কাজের সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

 

ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো ডিভাইস উৎপাদন ব্যয় কম, এমন দেশগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে স্যামসাং। চীনে প্রতিষ্ঠানটির দুটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে। তিয়ানজিনের কারখানা বন্ধ করা হলেও গুয়াংডং রাজ্যের হুইঝু কারখানা চালু রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

হুন্দাই মোটর সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক গ্রেগ রোহ বলেন, চীনের ডিভাইস বাজারে স্যামসাংয়ের অংশীদারিত্ব ১ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে দেশটিতে ডিভাইস উৎপাদন ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কাজেই চীনে স্যামসাংয়ের ফোন উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। অন্যদের মতোই কম খরচে হ্যান্ডসেট উৎপাদনের জন্য ভিয়েতনাম ও ভারতকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

 

চীনের তিয়ানজিন কারখানায় বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট মোবাইল ফোন উৎপাদন করত স্যামসাং। অন্যদিকে হুইঝু কারখানায় বছরে উৎপাদন হয় ৭ কোটি ২০ লাখ ইউনিট। অথচ ভিয়েতনামের দুই কারখানায় বছরে ২৪ কোটি ইউনিট মোবাইল ফোন উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

 

বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, চীন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার। দেশটির মোবাইল চিপ শিল্পের প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক নীতিতে আমরা সক্রিয় ভূমিকা রাখছি।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনাম ও ভারতের মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্যামসাং। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে এসব কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর ভারতের নয়ডায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা চালু করেছে স্যামসাং। এটিকে রফতানি হাব হিসেবে বর্ণনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

মোবাইল ডিভাইস ব্যবসার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), ফাইভজিসহ বেশ কয়েকটি খাতে বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে স্যামসাং। এসব খাতে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে বড় ধরনের ব্যবসার সুযোগ দেখছে।

 

গত আগস্টে স্যামসাং জানায়, আগামী তিন বছরে এসব খাতে মোট ১৬ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর ফলে ৪০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগের সিংহভাগ ব্যয় করা হবে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি গুরুত্ব পাবে।